এম এ খালেক
অধিকাংশ সূচক ইতিবাচক ধারায় প্রবাহমান থাকলেও অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে শঙ্কা কোনোভাবেই কাটছে না। বিশেষ করে খেলাপি ঋণের স্ফীতাবস্থা নিয়ে অর্থনীতিবিদগণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কোনোভাবেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমছে না। এমন কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে বক্তব্য উপস্থাপন কালে খেলাপি ঋণ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন,খেলাপি ঋণ কমাতে অর্থমন্ত্রী যে উদ্যোগী ঘোষণা দিয়েছেন তা অত্যন্ত সময়োপযোগি। ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অঙ্কে রাখতে যথার্থ পদক্ষেপ নেয়া হয়। এটি করা হলে দেশের শিল্প ও ব্যবসায় খাতকে সক্ষম করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। উচ্চ হারে সুদ থাকলে শিল্প বিকশিত হবে না। এ জন্য এই ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এক অনুষ্ঠানে প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন,আজ থেকে খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না। তার এই বক্তব্যের পর ব্যাংক সংশ্লিষ্টগণ আশান্বিত হয়েছিলেন। কেউই এটা অবশ্য বিশ^াস করেন নি যে,অর্থমন্ত্রী চাইলেই রাতারাতি খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা যাবে। তবে তারা ভেবেছিলেন এবার বুঝি খেলাপি ঋণ আদায়ের সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়া হবে। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম,খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বেড়ে গেছে এবং ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারি কর্তৃপক্ষ কিস্তি আদায়ের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার পরিবর্তে কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম দেখানোর জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ নানা উপায়ে লুকিয়ে বা অপ্রদর্শিত রেখে ব্যাংকের লেজার ক্লিন দেখানোর চেষ্টা করছেন। অর্থমন্ত্রী যখন ঘোষণা দিয়েছিলেন,আজ থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক টাকাও বাড়বে না কিন্তু খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতা হ্রাস পায় নি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। আর মাত্র এক কোয়ার্টারে ব্যবধানে মার্চ,২০১৯ তে খেলাপি ঋণের পরিমাণ খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এটা ব্যাংকগুলোর ছাড়কৃত ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এর সঙ্গে অবলোপনকৃত ঋণ যোগ করলে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। উল্লেখ্য,অবলোপনকৃত ঋণ খেলাপি ঋণের সর্বনি¤œ অবস্থা হলেও ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ক্লিন দেখানোর জন্য তা খেলাপি হিসেবে প্রদর্শন করা হয় না। ইতোপূর্বে কোনো ঋণ হিসাব মন্দ ঋণ বা ক্ষতি(যে ঋণ হিসাব থেকে কিস্তি আদায়ের আশা ব্যাংক ত্যাগ করে) হিসেবে চিহ্নিত হবার পর ৫ বছর অতিক্রান্ত হলে সেই ঋণ হিসাবধারির বিরুদ্ধে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের এবং শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ পূর্বক ঋণ হিসাবটি অবলোপন করা হতো। অবশ্য ঋণ হিসাব অবলোপন মানে কোনোভাবেই ঋণের দাবি ত্যাগ বা ক্ষমা করে দেয়া নয়। যেহেতু ব্যাংক বর্ণিত অ্যাকাউন্ট থেকে কিস্তি আদায়ের আশা ত্যাগ করে তাই অবলোপনকৃত ঋণ হিসাব থেকে কিস্তি আদায় হলে তা সরাসরি ব্যাংকের মুনাফায় যুক্ত হয়। কিছু দিন আগে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মন্দ ঋণ হিসাবে শ্রেণিকৃত ঋণ হিসাব অবলোপনের সময়সীমা ৫ বছরের পরিবর্তে ৩বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। আদালতে মামলা দায়েরের শর্ত এবং কোনো কোনো শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণের শর্তও শিথিল করা হয়েছে। এতে আগামীতে ঋণ হিসাব অবলোপনের হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। ফলে দৃশ্যমান বা প্রদর্শিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে দেখানো সম্ভব হবে। ঋণের কিস্তি আদায় না করেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেখানোর একটি চমৎকার উপায় হতে পারে ঋণ হিসাব অবলোপন নীতিমালা সহজীকরণের এই উদ্যোগ।
এ ছাড়া আরো একটি আইনি সংস্কার করা হয়েছে তা হলো ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণের নীতিমালা সহজীকরণ। যদিও মহামান্য আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে এই আইনি সংস্কার এখনো কার্যকর হতে পারেনি। এই সংস্কারকৃত আইনটি কার্যকর হলে একজন ঋণ খেলাপি এককালিন মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট প্রদান সাপেক্ষে তার ঋণ হিসাবটি এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য পুন:তফসিলিকরণ করে নিতে পারবেন। পুন:তফসিলিকরণকৃত ঋণের উপর তাকে ৯ শতাংশ হারে সুদ প্রদান করতে হবে। বর্তমানে ব্যাংকিং সেক্টরে ঋণের উপর আরোপিত সুদের হার ১২ থেকে ১৬ শতাংশ। আগেকার আইনে একটি ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণ করতে হলে আরোপিত সুদের ১৫ শতাংশ অথবা মোট ঋণের ১০ শতাংশ এককালিন পরিশোধ পূর্বক তিন বছরের জন্য তার ঋণ হিসাবটি পুন:তফসিলিকরণ করে নিতে পারতেন। ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণের সংশোধিত নীতিমালাটি কার্যকর হলে ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণ পুন:তফসিলিকরণের হিড়িক পড়ে যাবে। এতে কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেখিয়ে ব্যাংকের লেজার ক্লিন হিসেবে প্রদর্শন করা যাবে। কিন্তু অপ্রদর্শিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। কয়েক বছর আগে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এই অজুহাতে ৫০০ কোটি টাকা এবং তদুর্ধ অঙ্কের খেলাপি ঋণ পুনর্গঠন করা হয়। মোট ১১ টি শিল্পগোষ্ঠি এই সুযোগ গ্রহণ করে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনর্গঠন বা নিয়মিত করে নেয়। কিন্তু এদের মধ্যে মাত্র দু’টি শিল্পগোষ্ঠি নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেখানোর লক্ষ্যে ঋণ হিসাব শ্রেণিকরণ নীতিমালা আরো সহজীকরণের কথা শোনা যাচ্ছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ব্যাংকিং সেক্টর দৃশ্যত ঋণ খেলাপি সংস্কৃতি থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু খেলাপি ঋণের পরিমাণ কোনোভাবেই হ্রাস পাবে না। বরং কৃত্রিমভাবে খেলাপি কমিয়ে দেখানোর এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। এসব আইনি সংস্কার বাস্তবায়িত হলে আগামীতে হয়তো ব্যাংকিং সেক্টরে কোনো খেলাপি ঋণ থাকবে না। কিন্তু সেটা তো কিস্তি আদায়ের মাধ্যমে হবে না। হবে খেলাপি ঋণ আড়াল করার মাধ্যমে। অনেকটাই সেই ব্যক্তির মতো,যিনি প্রচন্ড দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা ভর্তি ডাস্টবিনের পাশে দাঁড়িয়ে নাকে রুমাল চেপে বলছেন,কই এখানে তো কোনো দুর্গন্ধ পাচ্ছি না। ঠিক একই ভাবে আমরা হয়তো বলতে পারবো,ব্যাংকিং সেক্টরে তো কোনো খেলাপি ঋণ নেই। আমরা খেলাপি ঋণমুক্ত ব্যাংকিং সেক্টর গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছি।
ক’দিন আগে জাতীয় সংসদে ৫ কোটি টাকা এবং তদুর্ধ অঙ্কের ৩০০ ঋণ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এরপর তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা এখনো গৃহীত হয় নি। কিন্তু এভাবে ঋণ খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করে কোনো লাভ হবে না। কারণ অতীতে অন্তত আরো দু’বার ঋণ খেলাািপদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালিন ১৯৯১ সালের ২০ মে বাংলাদেশ ব্যাংক জাতীয় দৈনিকসমূহের মাধ্যমে ১৭১ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। এদের প্রত্যেকের নিকট ব্যাংকগুলোর আড়াই কোটি টাকা বা তারও বেশি অঙ্কের খেলাপি ঋণ পাওনা ছিল। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি। বরং ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট প্রদান সাপেক্ষে তাদের ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালিন ১০ লাখ টাকা এবং তদুর্ধ অঙ্কের ঋণ খেলাপিদের এক বিশাল তালিকা জাতীয় সংসদে প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোনো ফল লাভ হয়নি। বর্তমান পর্যায়ে যে সব আইনি সংস্কার করা হচ্ছে তা হয়তো কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেখানোর জন্য কাজে লাগবে কিন্তু ব্যাংকিং সেক্টরকে খেলাপি ঋণ মুক্ত করার ক্ষেত্রে কোনো ন্যূনতম অবদান রাখতে পারবে না। বরং আগামীতে এই সেক্টরকে আরো বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে,খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য কতটা বিপদজনক বা ক্ষতিকর? খেলাপি ঋণ বলতে আমরা বুঝি একজন ঋণ গ্রহীতা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের সময় ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য যে লিখিত অঙ্গিকার করেন তার খেলাপ করা বা অঙ্গিকার ভঙ্গ করা। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করার পর নির্ধারিত সময়ে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক নানা ধরনের সমস্যায় পতিত হয়। ব্যাংকের নতুন ঋণদান কার্যক্রম বিঘিœত হয়। ব্যাংকের ঋণ আদায়ের সামর্থের ব্যাপারে আমানতকারিদের মনে সংশয় সৃষ্টি হতে পারে। খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারলে ব্যাংক নির্দিষ্ট হারে মুনাফা অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়। ক্রমবর্ধমান ঋণ চাহিদা পূরণের জন্য ব্যাংককে উচ্চ সুদে অন্য সূত্র থেকে আমানত সংগ্রহ করতে হয়। সংগৃহীত আমানতের উপর প্রদেয় সুদের হার বেশি হবার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ঋণের উপর আরোপিত সুদের হারও বেড়ে যায়। অর্থাৎ আমানত ও ঋণের মধ্যে স্প্রেড বেড়ে যায়। ঋণ গ্রহীতার নিকট থেকে নির্ধারিত সময়ে নিয়মিত ঋণের কিস্তি আদায় করতে না পারার কারণে ব্যাংক নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ব্যাংক তার প্রদত্ত ঋণের কিস্তি নিয়মিত আদায় করতে না পারলেও আমানতকারিদের ঠিকই চুক্তি অনুযায়ী নিয়মিত সুদ প্রদান করতে হয়। উপরন্ত প্রত্যেকটি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ব্যাংককে নির্ধারিত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। যেমন,নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ১ শতাংশ, স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্টের জন্য ৫ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। নি¤œ মানের ঋণ হিসাবের জন্য ২০ শতাংশ,সন্দেহজনক ঋণ হিসাবের জন্য ৫০ শতাংশ এবং মন্দ ঋণের জন্য ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংক বিভিন্ন ঋণ হিসাবের বিপরীতে যে প্রভিশন সংরক্ষণ করে সেই অর্থ নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারে না। একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। কোনো একটি ব্যাংকের যদি ১০০ কোটি টাকা মন্দ ঋণ থাকে তাহলে সেই ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ সেই ব্যাংকটি মন্দ ঋণের ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে না। আবার এই ১০০ কোটি টাকার বিপরীতে আরো ১০০ কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে বলে আরো ১০০ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট ২০০ কোটি টাকা তার পক্ষে বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে না। এই বিনিয়োগ ঘাটতি মেটানোর জন্য ব্যাংকটিকে বাধ্য হয়ে উচ্চ সুদে নতুন আমানত সংগ্রহ করতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য চেষ্টা চালাতে হবে বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা তাদের স্বাভাবিক কাজ করতে পারবে না। সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হচ্ছে ব্যাংকটি চাইলেও তুলনামূলক স্বল্প সুদে নতুন ঋণ দিতে পারবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার জন্য ব্যাংক মালিকদের পরামর্শ দিয়েছেন। ব্যাংক মালিকগণ সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার অঙ্গিকারের বিপরীতে সরকারের নিকট থেকে বেশ কিছু সুবিধা আদায় করে নিলেও তারা সেই অঙ্গিকার রক্ষা করেন নি। ব্যাংকিং সেক্টরে জমে থাকা পর্বত প্রমাণ খেলাপি ঋণ আদায় করা না গেলে কোনো ভাবেই সুদের হার কমবে না। এমন কি জোর করে সুদের হার কমানো হলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হবে না। তাই ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের প্রতি কোনো ধরনের সহানুভূতি প্রদর্শন না করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ ঋণ খেলাপি হতে সাহসী না হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকের যে সব কর্মকর্তা ঋণদানকালে নানা ধরনের অনৈতিকতার আশ্রয় গ্রহণ করে থাকেন তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ ব্যাংক কর্মকর্তা বা পরিচালকদের প্রশ্রয় না পেলে সাধারণত একজন ঋণ গ্রহীতার পক্ষে খেলাপি হওয়া সম্ভব হয় না। ঋণ প্রদানের সময় বন্ধকীযোগ্য সম্পদ মূল্যায়ন এবং ঋণের আবেদন পত্র সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করা হলে ভবিষ্যতে খেলাপি ঋণ সৃষ্টির আশঙ্কা অনেকটাই হ্রাস পাবে। বন্ধকীযোগ্য সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন প্রদত্ত ঋণের কিস্তি আদায় নিশ্চিত না করলেও ঋণের নিরাপত্তা বিধান করে। পরিচালনা বোর্ডে কোনো ব্যক্তিকে মনোনীত করার আগে তার সততা,আন্তরিকতা,দক্ষতা,সামাজিক সুনাম ইত্যাদি বিষয়গুলো বিশেষভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হবার পর তা নিয়ে হৈচৈ করার চেয়ে খেলাপি ঋণ যাতে সৃষ্টি হতে না পারে তা নিশ্চিত করাই উত্তম। বাঁধের উজানে কেউ যদি পানি ঘোলা করে তাহলে ভাটিতে ঘোলা পানিই প্রবাহিত হবে। কাজেই পানি যাতে কেউ ঘোলা করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে।