প্যারাস্যুটবন্দী হয়ে ততক্ষণে নেপালের সারাংকোটের আকাশে উড়ছেন অনেকে। পাহাড়চূড়ায় উঠতে উঠতে চোখের সামনে সেই দৃশ্য ধরা পড়ছিল ক্ষণে ক্ষণে। সেসব দেখেই বুক ধড়ফড় শুরু, কাঁপন ধরেছে হাত-পায়েও। একটু পরই যে উড়াল দিতে হবে! পানি পান করে তাই স্বাভাবিক হওয়ার একটুখানি চেষ্টা। কিন্তু ভয় কাটছে কই?
সেই ভয় আরও বাড়িয়ে দিয়ে প্যারাগ্লাইডিং পাইলট বাল্লু বাসেল হেলমেট আর প্যারাস্যুট পরিয়ে দিলেন। দুই মিনিট পরই আমাকে নিয়ে উড়াল দিলেন নীল আকাশে! ভয় আর অ্যাডভেঞ্চার মিলে অন্য রকম অনুভূতি।
পাইলটরা বেশ অভিজ্ঞ ও বন্ধুসুলভ। তাঁরা ভয় কাটাতেও সাহায্য করছিলেন খুব। তাই আকাশে ওড়ার একটু পরই দুরুদুরু ভাবটা চলে গেল। মাথার ওপর নীল আকাশ, পায়ের নিচে পাহাড় আর ফেওয়া লেকের উচ্ছলতা। পাশে আরও অনেকে পাখির মতো উড়ছেন। সঙ্গে আছে চিলের দলও। হিমালয়, অন্নপূর্ণা মাউন্টেন রেঞ্জ—সব যেন হাতের নাগালে। এ এক দারুণ অভিজ্ঞতা! উড়তে উড়তে নিজেকে মনে হচ্ছিল পাখি। আমি প্রায় ২৫ মিনিট ওপরে ছিলাম। নিচে নামার ইচ্ছা ছিল না একদমই। কিন্তু একসময় নামতে হয়, তাই নেমে আসি আকাশে ওড়ার অনাবিল আনন্দ নিয়ে।
এবার ফেরা যাক ভ্রমণের শুরুর কাছে। ৬ এপ্রিলের সকাল। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আমরা তিনজন উড়াল দিলাম হিমালয়কন্যা নেপালে। আমি আর দুই বন্ধু মোহাম্মদ রুবেল ও মিথুন। তাঁদের পেশা আলাদা, তবে ভালোবাসেন একই জিনিস—ছবি তোলা আর ঘোরাঘুরি। তাই ভাবনায় মিলে গেল আমার সঙ্গে। ওই দিন দুপুর ১২টায় আমরা পৌঁছে যাই নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তারপর ভিসা প্রসেসিং শেষে প্রাইভেটকারে চলে যাই কাঠমান্ডুর থামেল এলাকার অন্নপূর্ণা গেস্ট হাউসে। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর বিকেলে পোখারা যাওয়ার জন্য বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলতে থাকি। তখন দেখা হলো আনিস শর্মা নামের এক নেপালি নাগরিকের সঙ্গে। শর্মা সেখানে একটি পর্যটন অফিস চালান। তিনি আমাদের পোখারা যাওয়া-আসা, হোটেলের বন্দোবস্ত ও বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখার ব্যবস্থা করে দিলেন। বিনিময়ে নিলেন ৩০০ ডলার। ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত থামেল শহর ও বিভিন্ন দোকানের জিনিসপত্র দেখে কেটে গেল।