এম এ খালেক
মিডিয়াকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। সম্মুখে দৃশ্যমান বস্তুর ছবি যেমন আয়নায় অবিকল প্রতিবিম্বিত হয় তেমনি মিডিয়ার (প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও ভিজুয়াল) মাধ্যমে একটি দেশের সার্বিক চিত্র অত্যন্ত পরিস্ফুট হয়ে উঠে। মিডিয়ার চোখ ফাঁকি দেয়া খুবই কঠিন কাজ। তাই প্রতিটি সরকারই চেষ্টা করে নানাভাবে মিডিয়াকে পাশ কাটিয়ে যাবার। এমন কি সংবাদপত্র বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মুখ বন্ধ করার জন্য প্রায়শই সরকার নানা ধরনের নিবর্তনমূলক আইন পাশ ও প্রয়োগ করে থাকেন। মিডিয়ার স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র অনেকটা একই সূত্রে গাঁথা। এ কারণেই যে দেশের গণতন্ত্র যত উদার সেই দেশের সংবাদপত্র তত স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে। অন্যভাবে বলা যায়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দৃষ্টে একটি দেশের গণতান্ত্রিক অবস্থান নির্ণয় করা যায়। মূলত এসব কারণেই সংবাদপত্র বা মিডিয়াকে ফোর্থ স্টেট বা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। সংবাদপত্র যেমন রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে তেমনি জাতীয় উন্নয়নে একজন সাংবাদিকের দায়িত্বও কম নয়। দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা একটি সরকারের জন্য বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। তেমনি ‘দলকানা’ সাংবাদিকতা জনগণের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। একজন সাংবাদিক হচ্ছেন বিচারকের মতো। বিচারক যেমন আবেগ এবং দলীয় আনুগত্যের ঊর্ধে উঠে নিরপেক্ষভাবে রায় প্রদান করেন একজন সাংবাদিককেও ঠিক তেমনি সকল প্রকার ভয়ভীতির এবং পক্ষপাতিত্বের বাইরে গিয়ে নিরপেক্ষভাবে সঠিক সংবাদ পরিবেশন করতে হয়। কোনো সাংবাদিক যদি নিরপেক্ষভাবে তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন তাহলে তাকে আর যাই হোক সাংবাদিক বলা যায় না। একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিককে কোনো বিষয়ে এক্সপার্ট না হলেও চলে কিন্তু তাকে সব বিষয়েই খোঁজ-খবর রাখতে হয়। এ জন্যই বলা হয় ‘ এ রিয়েল জার্নালিস্ট ইজ এ জ্যাক অব অল ট্রেড,মাস্টার অব নান।’ একজন আইনজীবী যেমন প্রতিনিয়ত আইন চর্চার মাধ্যমে নিজেকে রিদ্ধ করে গড়ে তোলেন, একজন সাংবাদিককেও ঠিক তেমনি অবিরাম চর্চার মাধ্যমে নিজের উৎকর্ষ সাধন করতে হয়। সমাজে একজন প্রকৃত সাংবাদিকের মর্যাদা অনেক বেশি। আমাদের দেশের সংবাদ প্রত্রের গৌরবজনক ইতিহাস রয়েছে। বাংলাদেশের সাংবাদিকগণ প্রতিটি গণআন্দোলনে সম্মুখ সারিয়ে থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশে এমন অনেক সাংবাদিক আছেন যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন। এখনো অনেকেই আছেন যারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সাংবাদিকতা করে চলেছেন। তাদের নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। কিন্তু ইদানিং কিছু কিছু সাংবাদিকের আবির্ভাব ঘটেছে যারা সাংবাদিকতা চর্চার চেয়ে দলীয় আনুগত্য এবং লেজুরবৃত্তিতে নিয়োজিত রয়েছেন। এদের মাঝে সাংবাদিকতায় উৎকর্ষ সাধনের চেয়ে অন্য কোনোভাবে নিজেদের হাইলাইট করার প্রবণতা দৃশ্যমান। এদের কারণে সাংবাদিকতার মান অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সংবাদ লেখায় সময় এমন সব সাধারণত ভুল করে থাকেন, যা একটু সতর্ক হলেই এড়ানো সম্ভব। আমি এখানে সাধারণ কিছু ভুল নিয়ে আলোচনা করবো যা চেষ্টা করলেই এড়ানো যেতে পারে।
সময় মতো ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ ঋণগ্রহীতাকে লেখা হয় ‘খেলাপি ঋণগ্রহীতা।’ এ ধরনের শব্দ প্রয়োগ মোটেও ঠিক নয়। কারণ খেলাপি ঋণ কেউ গ্রহণ করে না বরং ঋণ গ্রহণ করেই একজন উদ্যোক্তা নির্ধারিত সময়ে তা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে ঋণ খেলাপিতে পরিণত হন। কাজেই এক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ গ্রহীতা নয় ‘ঋণ খেলাপি’ শব্দটি ব্যবহার করাই উত্তম। প্রায়শই লেখা হয়,আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এখানে ভবিষ্যৎ কালের দ্বিত্ব ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। আগামী দিন এবং ভবিষ্যৎ শব্দদ্বয় একই অর্থ প্রকাশ করে। কাজেই এখানে যে কোনো একটি শব্দ ব্যবহার করা উচিৎ। প্রায়শই লেখা হয়, চুরির দায়ে একজন গ্রেপ্তার। আসলে এখানে লিখতে হবে চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার। কারণ কোনো ব্যক্তি উপযুক্ত আদালত কর্তৃক দোষি প্রমানিত না হলে তাকে দোষি বলা যায় না। এ জন্যই কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা যায় না। বিভিন্ন পত্রিকা বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সংবাদে বলা হয়, একজন যুবতীকে ‘জোরপূর্বক ধর্ষণ’ করা হয়েছে। ধর্ষণ শব্দের অর্থই হচ্ছে কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা। দু’জনের স্বেচ্ছা সম্মতিক্রমে যদি যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা হয় তাকে ব্যভিচার বা অবৈধ যৌন সম্পর্ক বলা যেতে পারে। কাজেই এক্ষেত্রে শুধু ধর্ষণ লিখলেই চলে। আবার লেখা হয়, অমুক মহিলা গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এখানে গণধর্ষণ শব্দের অপব্যবহার লক্ষ্যণীয়। একজন ব্যক্তি বা একাধিক ব্যক্তি যখন পর্যায়ক্রমে অনেক মহিলাকে ধর্ষণ করে তখন তাকে গণধর্ষণ বলা হয়। কয়েকজন মিলে যখন কাউকে ধর্ষণ করে তখন তাকে ‘গ্যাং রেপ’ বা দলবদ্ধ ধর্ষণ বলা যেতে পারে। অনেক সময় লেখা হয়, প্রায় লক্ষাধিক মানুষ গৃহহারা হয়েছেন। স্মরণযোগ্য যে, প্রায় এবং ধিক এই শব্দ দু’টি একই বাক্যে ব্যবহার করা যায় না। কারণ প্রায় বলতে উল্লেখিত সংখ্যার কাছাকাছি অবস্থাকে বুঝায়। যেমন প্রায় এক লাখ অর্থাৎ এক লাখ পূরণ হয়নি কিন্তু কাছাকাছি। আর লক্ষাধিক বলতে বুঝায় এক লাখের কিছু বেশি। কাজেই ‘প্রায়’ এবং ‘ধিক’ এই শব্দ দু’টি কোনোভাবেই একই বাক্যে ব্যবহার করা চলে না। লেখা হয় ‘বিরাট গরু-ছাগলের হাট।’ আসলে কথাটি হবে গরু-ছাগলের বিরাট হাট। কারণ বিরাট শব্দটি দিয়ে হাটের বিশালতাকে বুঝানো হয় গরু বা ছাগলের নয়। একই ভাবে উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় নয়, লিখতে হবে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। আসন্ন ধামরাই উপজেলা নির্বাচন নয়, লিখতে হবে ধামরাই উপজেলার আসন্ন নির্বাচন। কারণ নির্বাচনটাই আসন্ন, ধামরাই উপজেলা নয়। অধিকাংশ পত্রিকায় লেখা হয় এবং টিভিতে বলা হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু এটা আসলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। ইংরেজিতে বলা হয় পিস কিপিং ফোর্স। আমরা প্রতিনিয়তই লিখে থাকি ইংরেজি ২০২০ সাল। কিন্তু ইংরেজি সন বলে আসলে কিছু নেই। আমরা যাকে ইংরেজি সন বলি এটা আসলে খৃষ্ট্রীয় সন বা খৃষ্টাব্দ। যিশু খৃষ্টের জন্ম তারিখকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য খৃষ্টাব্দ চালু করা হয়েছিল। যেমন সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর মদীনায় হিজরতকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য হিজরি সাল প্রচলন করা হয়েছিল। যিশু খৃষ্টের জন্ম হয়েছিল শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (স:) এর প্রায় ৫৭৯ বছর আগে। তাই খৃষ্টাব্দ এবং হিজরী সালের মধ্যে সময়ের পার্থক্য প্রায় ৫৭৯ বছর। ইংরেজরা এক সময় প্রায় বিশ^ জয় করে নিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে তারা কোনো সন বা সাল চালু করতে পারেনি। আমরা মুসলমানরা অনেক সময় ইহুদিদের অনুকরণে ১৩ সংখ্যাকে অশুভ বলে মনে করি। ১৩ তারিখে কোনো কাজ করতে গেলেই মনটা অজান্তেই কেঁপে উঠে। এই বুঝি কোনো অমঙ্গল সাধিত হলো। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না ইহুদিরা কেনো ১ তারিখকে ‘আন লাকি’ বলে থাকেন। প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর নামের অদ্যাক্ষর ইংরেজি ‘এম’ দিয়ে শুরু। ইংরেজি এ্যালফাবেটে এম অক্ষরের অবস্থান হচ্ছে ১৩ বা থার্টিন। মূলত এ কারণেই ইহুদিরা ১৩ তারিখকে ‘আন লাকি থারটিন বা অশুভ ১৩ বলে বলে থাকেন। আশঙ্কা এবং সম্ভাবনা সম্পূর্ণ বিপরীত মুুখি দু’টি শব্দ। প্রায়শই পত্রিকায় এই দু’টি শব্দের ভুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যেমন বলা হয়, এ বছর ভয়াবহ বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আসলে শব্দটি হওয়া উচিৎ ছিল বন্যার আশঙ্কা আছে। সম্ভাবনা শব্দটি ব্যবহার করা হয় ভালো অর্র্থে। তবে এবং তাহলে শব্দ দু’টির ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়। ‘তবে’ শব্দটি হচ্ছে কিন্তু’র ঘনিষ্ট বিকল্প প্রতি শব্দ। একই নেচারের দু’টি শব্দকে যখন সংযুক্ত করা হয় তখন তাহলে ব্যবহৃত হয়। যেমন, আমি মগবাজার যাবো তাহলে ট্রেন দেখতে পাবো। আর আমি মগবাজার যাবো তবে ট্রেন দেখবো না এই দু’টি শব্দ নিশ্চয়ই একই অর্থ বহন করে না। বংশীয় পদবী, প্রাতিষ্ঠানিক পদবী ইত্যাদি নামের আগে থাকলে সে ক্ষেত্রে জনাব শব্দটি ব্যবহৃত হয় না। যেমন, প্রফেসর, ডক্টর, গাজি, চৌধুরী, ইত্যাদি শব্দ নামের আগে থাকলে সে ক্ষেত্রে তার আগে জনাব শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। মহিলাদের নামের আগে অনেক সময়ই অজ্ঞতা বশত ‘জনাবা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়। জনাবা শব্দটি অত্যন্ত অসম্মানজনক একটি শব্দ। তাই জনাবা শব্দটি মহিলাদের নামের আগে ব্যবহার করে তাদের সম্মনিত করার পরিবর্তে অসম্মানিতই করা হয়। জনাব শব্দের কোনো লিঙ্গান্তর ‘করার প্রয়োজন নেই। ‘হজরত’ শব্দটি যেমন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায় ‘জনাব’ শব্দটিও ঠিক তাই। আমার কথায় কথায় ‘সমালোচনা’ শব্দ ব্যবহার করি। কিন্তু আমরা অনেকেই সমালোচনা শব্দের প্রকৃত অর্থ জানি না। সমালোচনা শব্দের অর্থ হচ্ছে নির্মোহভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ভালো-মন্দ বিশ্লেষণ করা। সমালোচনা শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে কি দাঁড়ায়? সম-আলোচনা। সমালোচনা শব্দের অর্থ নিশ্চিয়ই নিন্দাবাদ করা নয়। বাংলা সাহিত্যে সমালোচনা শাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। প্রয়াত মোহিত লাল মজুমদার আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন সমালোচনা সাহিত্য কতটা কালোতীর্ণ এবং শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে। বাংলা সাহিত্যে সমালোচনা শাখাকে তিনি অন্যান্য শাখার সমকক্ষ করে তুলেছিলেন। সমালোচককে কোনো বিষয়ে লেখার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভালোভাবে জ্ঞানার্জন করতে হয়। সমালোচনা শব্দটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কারণ সমালোচনা কোনো ফেলনা বিষয় নয়।
এবার কয়েকটি সাধারণ বানান ভুলের প্রসঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে। ‘ন’ এবং ‘ণ’ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা প্রায়শই দ্বিধায় পতিত হই। বানান রীতি জানা থাকলে এই সমস্যা সহজেই সমাধান করা যেতে পারে। কোনো শব্দে ‘র’ অথবা ‘ড়’ থাকলে তারপর সাধারণত মূর্ধণ্য (‘ণ’) বসে। যেমন ‘কারণ।’ কিন্তু শব্দটি যদি বিদেশি ভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়ে থাকে তাহলে মূর্ধণ্য না বসে ‘ন’ ব্যবহৃত হবে। যেমন, ‘কর্নেল।’ আমরা ‘ভূত’ এবং ‘অদ্ভুত’ শব্দের বানান ব্যবহারের ভুল করে থাকি। মনে রাখতে হবে, অদ্ভুত শব্দ ব্যতীত অন্য সব ভূতের ক্ষেত্রে ( ূ ) ব্যবহৃত হবে।
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত অভিধান অনুসরণ করলে খুব সহজেই এই সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। রক্তের বিনিময়ে আমরা এই ভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছি। কিন্তু এখনো আমরা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে পারদর্শিতা অর্জন করতে পারিনি। আমরা বিদেশি ভাষা ভালো না জানলে লজ্জিত হই। কিন্তু নিজের মাতৃভাষা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে মোটেও লজ্জিত হই না। বরং ক্ষেত্র বিশেষে গর্বিত হই। আমরা ভুল বানান লিখতেও ভুল করি। প্রায়শই লিখে থাকি ভূল। বাংলা একাডিমির বানান বিধি অনুযায়ী, রেফ(র্ ) এর পর অক্ষরের দ্বিত্ব হয় না। যেমন, আগে লেখা হতো কর্জ্জ এখন তা লিখতে হয় কর্জ। অনেকেই বলে থাকেন লজ্জাস্কর। আসলে বাংলা ভাষায় ‘লজ্জাস্কর’ বলে কোনো শব্দ নেই। আসলে শব্দটি হবে লজ্জাজনক। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে। যেমন তাজউদ্দিন সরণি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লেখা হয় তাজউদ্দিন স্মরণি অথবা তাজউদ্দিন স্মরণি। আমরা অনেক সময় জন্ম দিন আর জন্ম বার্ষিকী গুলিয়ে ফেলি। মনে রাখতে হবে, জন্ম দিন সব সময়ই জন্ম বার্ষিকীর চেয়ে এক সংখ্যা বেশি হবে। যেমন আজ যদি আমার ৬০তম জন্ম বার্ষিকী হয় তাহলে ৬১তম জন্ম দিন হবে।
দু’টি প্রবাদ নিয়ে সামান্য কিছু আলোচনা করা যেতে পারে। আমরা বলে থাকি, পাপকে ঘৃণা করো, পাপিকে নয়। আসলে এই প্রবাদটি উল্টো হওয়াই বাঞ্ছনীয়। পাপ একটি বিমূর্ত ধারনা। পাপি হচ্ছেন কর্তা। তিনিই কাজটি করে থাকেন। কাজেই আমরা যদি পাপের উৎসমুখ বন্ধ না করি তাহলে পাপ হতেই থাকবে। কেউ যদি বাঁধের উজানে পানি ঘোলা করতে থাকে আর আমরা ভাটিতে পানি পরিস্কার করি তাহলে কখনোই ভালো পানি পাওয়া যাবে না। আমরা যদি যিনি উজানে পানি ঘোলা করছেন তাকে সরিয়ে দিতে পারি তাহলেই শুধু ভাটিতে ভালো পানি পাওয়া সম্ভব। ঠিক তেমনি আমরা যদি পাপিকে প্রতিরোধ করতে পারি তাহলেই পাপ বন্ধ করা সম্ভব। প্রবাদ আছে, ‘বোবার কোনো শত্রু নেই।’ এই প্রবাদটি এখন আর সত্যি নেই। কারণ বোবার সম্পত্তি দখল হবার ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে। এমন কি বোবা নারীরাও ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকেন। কাজেই বোবার শত্রু নেই এ কথাটি ঠিক নয়।
টেলিভিশনে এমন অনেক বাক্য এবং বানান লেখা হয় যা শুনলে বা দেখলে লজ্জিত হতে হয়। বাংলা ভাষায় এদের দক্ষতা দেখলে সত্যি মর্মাহত হতে হয়। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। মায়ের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা না জন্মালে কোনো দিনই সত্যিকার দেশপ্রেমিক হওয়া যাবে না। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই চেষ্টা করা উচিৎ কিভাবে সঠিকভাবে বানান এবং শব্দ ব্যবহার করা যায় তা রপ্ত করা।